নকশালবাড়ি , শোষণ-মুক্তির সাংস্কৃতিক নির্মাণ : কুহেলী

আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে ১৯৬৭ সালে উত্তরবঙ্গের নকশালবাড়ি, ফাঁশিদেওয়া, খড়িবাড়ি, হাতিঘিষার মতো ছোটো গ্রামাঞ্চলে কৃষক বিদ্রোহ ফেটে পড়ে। অতীতের তেভাগা, তেলেঙ্গানার মতো কৃষক বিদ্রোহের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোটো এই বিদ্রোহের ঢেউ সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল। নিপীড়িত মানুষের শোষণ-মুক্তির স্বপ্নে এই ধারার রাজনৈতিক সংগ্রামের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী, এমনকি, আজ পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হবার পরও এই ‘বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ’ ভারতবর্ষের কোটি কোটি শোষিত জনগণের মুক্তির দিকনির্দেশক রাজনৈতিক ডিসকোর্স হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই, এই বিপ্লবী ধারাটা স্বাভাবিক নিয়মেই রাজনীতির গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে থাকেনি – শিল্প, সাহিত্যের বিস্তৃত পরিসরে এর নতুন এক সাংস্কৃতিক নির্মাণ ঘটেছে, যা অব্যাহত রয়েছে আজও। সমর সেন বলেছিলেন, ‘নকশালবাড়ির পর কোনো কিছুই আর আগের মতো থাকেনি’। প্রচলিত ব্যবস্থার স্থাণুত্ব থেকে শুরু করে প্রতিটি চিন্তার কাঠামোকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। বিশ শতকের ভারতবর্ষের সাহিত্য সংস্কৃতি শিল্প রাজনীতি অর্থনীতি ইত্যাদির বৃহৎ পরিসরে নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রভাব ও এই ধারার সাংস্কৃতিক নির্মাণ শোষণ-মুক্তির প্রশ্নে অতীতের সকল চিন্তা-চর্চাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে, মৌলিক (র‍্যাডিকাল) এক অভিমুখ তৈরি করে দিয়েছে।

50 naxalyears

ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার দীর্ঘ পর্বে ভারতের কমিউনিস্ট ধারার রাজনীতির ক্ষেত্রে নকশালবাড়ি আন্দোলন ও তার পরবর্তী গতি-প্রকৃতি একটি মৌলিক ও আগে থেকে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিগত একটা ভিত ছিল। তৎকালীন ইউরোপীয় আদলে কোনো স্বয়ম্ভু বাম উচ্ছাসও ছিল না। বা চিনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবে উদ্ভূত কোনো মাওবাদী ফসলও ছিল না। নকশালবাড়ির কৃষক বিদ্রোহের মূলে রয়েছে উপনিবেশোত্তর শোষণ ও কৃষি প্রশ্নে কাঠামোগত বৈকল্যের বিরুদ্ধে এক স্বতঃস্ফূর্ত অথচ সচেতন প্রয়াস। যার শেকড় সংযোজিত আছে অতীতের তেভাগা, তেলেঙ্গানার কৃষক বিদ্রোহের পরম্পরায়। তেভাগা , তেলেঙ্গানা ও নকশালবাড়ি – এই তিনটি বৈপ্লবিক বিদ্রোহের মধ্যেই নিহিত ছিল চমৎকার এক বৈপ্লবিক পরিস্থিতি, সমাজ ও কাঠামোকে পালটে দেওয়ার সন্ধিক্ষণ। অথচ এসবের পরও নকশালবাড়ির সাথে অতীতের কৃষক বিদ্রোহগুলির গুরুত্বপূর্ণ কিছু পার্থক্য ছিল। নকশালবাড়ির ক্ষত্রে আগে থেকে চারু মজুমদারের ‘ঐতিহাসিক আটটি দলিল’-এর অনুশীলন ও অনুধাবনের এক পরিসর ছিল, বিপ্লবীরা ‘সংশোধনবাদী’ পার্টি থেকে বেরিয়ে এসে ধাপে ধাপে নিজেদের সংহত করেছে, তৃতীয় কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম দিয়েছে আর মেহনতি জনতার লড়াইকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের লড়াইতে উত্তরণের এক সাধারণ ও সামগ্রিক দিশা তৈরির কাজ করতে পেরেছে। তেলেঙ্গানা বা তেভাগার ক্ষেত্রে না ছিল সেই সার্বিক প্রস্তুতিপর্ব, না ছিল নেতৃত্বের বিপ্লবী অংশের কোনো সাংগঠনিক-রাজনৈতিক কেন্দ্রভূমি, এতে গিয়ে সিপিআই-র সংশোধনী লাইনের কাছে এই বিদ্রোহের অপার সম্ভাবনা সত্ত্বেও অকালমৃত্যু ঘটেছে। এই ফারাকটাই ইতিহাসের গতি প্রকৃতি দুই ক্ষেত্রে দুইভাবে নির্ধারিত করে দিল।

আসলে নকশালবাড়ির আন্দোলনে মৌলিক যে প্রশ্নে দেশব্যাপী হাজার হাজার জনতা শোষণ থেকে মুক্তির জন্য আত্মবলিদানের ইতিহাস রচনা করেছিল সেটা হচ্ছে জমি সংক্রান্ত অধিকার। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে ভারতীয় শাসকদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর ভারতের সমাজবিদ ও অর্থনীতিবিদরা ভারত রাষ্ট্রের চরিত্রায়ন করেছিলেন আধা-সামন্তবাদী আধা-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র হিসেবে।  প্রকৃতপক্ষে ভারতের শাসকশ্রেণি বিদেশি পুঁজি, প্রযুক্তি ও ঋণের উপর জোর দিয়ে ভারতকে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির উপর নির্ভরশীলতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে দেয়। বিদেশি সংস্থার দ্বারা সরাসরি বিনিয়োগের মাধ্যমে, ঋণ, প্রযুক্তি ও সাহায্যগুলোর বেড়াজালে ভারতকে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ পুঁজিগুলির লুণ্ঠনের ক্ষেত্র-ভূমি হিসেবে তৈরি করে দেয়। অন্যদিকে বড়ো সংখ্যক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, যাদের টিকে থাকার লড়াই কেন্দ্রিত আছে কৃষিজমির অধিকারের মধ্যে। কৃষিক্ষেত্রে অবাধ সামন্তবাদী শোষণ, যা ছিল ঔপনিবেশিক কালেরই ধারাবাহিকতা। ঔপনিবেশিক সময়ে ব্রিটিশ ভারতবর্ষে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও অন্যান্য ব্যবস্থার মাধ্যমে যে জমিদার শ্রেণি গড়ে উঠেছিল, যারা উপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা ও কৃষকদের মধ্যবর্তী স্তরে থেকে উদ্বৃত্ত লুণ্ঠনের কাজ চালিয়ে যেত। স্বাধীনতা লাভের পরও এই ধারাবাহিকতা বর্তমান ছিল। যদিও ভূমি সংস্কার আইনের মাধ্যমে এই শোষণ-কাঠামোকে ঘুচানোর চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু জমির প্রশ্নে এই শ্রেণিটাকে বাগে আনা যায়নি, তারা আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে নানা কৌশলে তাদের আধিপত্যকে কায়েম রাখতে সফল হয়েছিল। এছাড়াও সামাজিক কাঠামোগত কিছু সমস্যাও ছিল। সারা ভারতেই, কয়েকটা ব্যতিক্রম বাদ দিলে, জমিদার শ্রেণির প্রায় পুরোটাই ছিল উচ্চবর্ণের। এর বিপরীতে কৃষক, ভাগচাষী, খেতমজুররা ছিল নিম্নবর্ণ হিন্দু, মুসলমান বা আদিবাসী। কোথাও কোথাও ছিল মধ্যবর্ণেরও কিন্তু আধিপত্যকারী শ্রেণিভুক্ত নয়। এই অবস্থায়, সেসময়ের গোটা শাসন ব্যবস্থাই ছিল আধিপত্যকামী উচ্চবর্ণদের। এভাবে, গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্রগঠনের পরও শোষণ অবদমনের চোরাস্রোত গোটা ব্যবস্থাটাকেই একটা আধা-সামন্তবাদী আধা-ঔপনিবেশিক চরিত্র দিয়েছিল, যা কমবেশি পরিমাণে ও মতভেদে সমস্তটাই নতুন বৈশিষ্টসহ বর্তমান।

এই পরিস্থিতিতে নকশালবাড়ি সহ গোটা ভারতবর্ষে কৃষক জনতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভ যে একটা বৈপ্লবিক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে, সেটা চারু মজুমদার সহ সে সময়ের কমিউনিস্ট পার্টির বিপ্লবী অংশটা অনুধাবন করতে পেরেছিল।

আজ পঞ্চাশ বছর পরও এই নকশালবাড়ির ঘটনা কেন প্রাসঙ্গিক ? প্রাসঙ্গিক এই কারণেই যে — নকশালবাড়ি বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে , অতীতের আলোকে অর্ধশতাব্দীব্যাপী চলমান এক বাস্তবতাকে দেখে নেওয়ার যায়, যা একটি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক নির্মাণের প্রেক্ষাপটকে উন্মোচিত করে। বিশ শতকের সত্তরের দশক থেকে চিন্তাজগতের সামগ্রিক বীক্ষার ক্ষেত্রে অন্যান্য সকল আলোড়নগুলো নিয়ে চর্চা করতে গেলে, সেটা নকশালবাড়িকে বাদ দিয়ে হয় না।

naxalbari504

সমাজে একটা বড়ো আলোড়ন ঘটে গেলে, তাকে কেন্দ্র করে নতুন একটা দর্শন নির্মিত হয়, যে দর্শনগুলো থেকে উঠে আসে এমন সব প্রতিকল্প, যা সাহিত্য ও শিল্পের বিভিন্ন ধারাগুলোতে প্রতিভাত হয়। এই যেমন গান, কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদিতে। যা চিন্তার জগতে এমন কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসে, যে পরিবর্তনের জন্য পুরোনো স্থিতাবস্থার সাংস্কৃতিক হেজিমিনিতে ভাঙন ধরে । এই কালচারেল হেজিমনি ভাঙার সাথে সাথে নির্মাণ ঘটে নতুন সংস্কৃতির। এটা স্বীকার করতেই হয় যে সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মুক্তির প্রতি দায়বদ্ধতা। এই দায়বদ্ধতা ধরণ চলমান ও গণমানুষের জীবনযাত্রার সাথে একান্তই সংপৃক্ত। যতক্ষণ না পর্যন্ত গণমানুষের পুনর্জাগরণ হচ্ছে, ততক্ষণ এই মুক্তিকামী সংস্কৃতির হচ্ছে স্থিতাবস্থার সংস্কৃতির কাছে আক্রমণাত্মক। যা হওয়া স্বাভাবিক। নকশালবাড়ি আন্দোলনের ক্ষেত্রেও এই একই ধারা ছিল শিল্প সাহিত্যে। শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা ভারতে সেই সময় রাষ্ট্র বনাম সাধারণ মানুষের যে লড়াই ও রাষ্ট্রের নৃশংস দমন-পীড়ন প্রতিদিন প্রকাশ্য হয়ে উঠেছিল, সেটা গল্প কবিতা নাটক গান ইত্যাদিতে ধরেছিলেন সেই সময়ের শিল্পী সাহিত্যিকরা। এবং নকশালবাড়ির বিপ্লব স্তিমিত হয়ে যাওয়ার পরও তা বর্তমান ছিল। যেমন মহাশ্বেতা দেবীর ‘হাজার চুরাশির মা’। শৈবাল মিত্রের ‘অগ্নির উপাখ্যান’, ‘অজ্ঞাতবাস’, ‘তারিণী পাহাড়ে বসন্ত’। লড়াইয়ের ময়দানে থেকে যারা লিখতেন, তাদের মধ্যে স্বর্ণ মিত্রের (ছদ্মনাম) ‘গ্রামে চলো’, জয়ন্ত জোয়ারদারের (ছদ্মনাম) ‘এভাবেই এগোয়’ মনে দাগ কাটার মতো। উৎপল দত্তের ‘তিতুমীর’ ও ‘তীর’ নাটক তো সে সময়কার নাট্যজগত উথাল-পাতাল করেছিল। এমনকি বোম্বেতে উৎপল গ্রেপ্তার হন ও তাকে কারাবরণও করতে হয়েছিল। কবিতার জগতে কমলেশ সেন, স্বপন চক্রবর্তী, সরোজ দত্ত, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দ্রোণাচার্য ঘোষ, তিমিরবরণ সিংহ, মুরারী মুখোপাধ্যায়, অমিয় চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী দেব, মণিভূষণ ভট্টাচার্য, নবারুণ ভট্টাচার্য ও আরো অনেক কবিরা রয়েছেন যারা নকশালবাড়ি আন্দোলনকে কবিতার ক্যানভাসে ধরতে পেরেছিলেন। এদের মধ্যে অনেকেই নকশালবাড়ি আন্দোলনের সময় হয় সংঘাতে মারা গেছেন বা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ণের বলি হয়েছেন। কেউ কেউ আবার নিরাপদ দূরত্ব থেকে গোটা বাস্তবতাটা অনুধাবন করেছেন। গল্প সাহিত্যে অসংখ্য গল্পকারের অসংখ্য গল্প সময়ে সময়ে সংকলিত হয়েছে। গানের জগতে পুরোনো গণসংগীতগুলো নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে। পল্লীকবিদের আঞ্চলিক ভাষায় অসংখ্য গান লোকের মুখে মুখে উচ্চারিত হত তখন। বাংলা সিনেমায়, সেকালে একমাত্র ঋত্বিক ঘটক, সত্যজিৎ রায় ও মৃণাল সেন – এই তিনজনই সত্তর দশকের যুবাদের দুর্দমনীয় স্পর্ধা ও অভিব্যক্তিকে বোঝার চেষ্টা করেছিলেন।  তবে বাংলা ছবিতে বিশ শতকের উথাল-পাতাল সত্তরের দশক প্রায় অসমাপ্তই থেকেছে।

আগেই বলা হয়েছে যে পশ্চিমবাংলার অখ্যাত কয়েকটি গ্রাম থেকে নকশালবাড়ির কৃষক বিদ্রোহ আছড়ে পড়েছিল ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। এভাবেই এই বিপ্লবের চেতনায় বিশ শতকের ভারতের অন্যান্য ভাষার সাহিত্যকেও নাড়া দিয়েছিল। যেমন তেলুগু সাহিত্যের কথাই ধরা যাক। নকশালবাড়ি আন্দোলনের আগুন যখন অন্ধ্রের শ্রীকাকুলামের পাহাড় থেকে পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল, তেলুগু সাহিত্যে আলোড়ন ঘটেছিল ব্যাপক। মহাকবি শ্রীশ্রী-র নেতৃত্বে গঠিত হল ‘বিপ্লব রচয়িতল সংঘমু’ বা সংক্ষেপে বিরসম। এই বিরসম একটি সাহিত্যের বিপ্লবী ধারা হয়ে ওঠে, যা ভারভারা রাওদের নেতৃত্বে আজও বর্তমান। চেরাবাণ্ডারাজু, নিখিলশ্বরের মতো বিপ্লবী কবিরা বিভিন্ন শিবির ছেড়ে বিরসমের ছাতার তলায় সংগঠিত হন। সত্যমূর্তি, ভারভারা রাও, জ্বালামুখী, অশোক ঢংকসালা – এরা সবাই গণসংগ্রামের ধারায় বিপ্লবী সাহিত্যের নতুন অভিমুখ তৈরি করে দেন। গণশিল্পীরা নতুন নতুন নাটক লিখলেন, গান বাঁধলেন। যেমন সত্তরের দশকে অন্ধ্রে সৃজনশীল গীতিকার হিসেবে উঠে আসেন সুব্বারাও পানিগ্রাহী। পরবর্তী সময়ে ও আজও গদর এই ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান। মহারাষ্ট্রের দলিত সাহিত্যে নতুন সংযোজন ঘটে নকশালবাড়ির ঢেউয়ে। সাহিত্যে উঠে আসে জমির প্রশ্ন, উচ্চবর্ণ সামন্ত প্রভুদের হাতে দলিতদের উপর শোষণ নিপীড়নের কথা। পাঞ্জাবী সাহিত্য, পাঞ্জাবের উর্দু ও হিন্দি লেখকরা নতুন করে সাহিত্যে নকশালবাড়ির চেতনার সংযোজন ঘটান। অজিত কৌর, জসবীর ভল্লর, দেবীন্দর, পেরাসিং রমতা, প্রেম গোরখী, রামস্বরূপ অনখী, গুরুচরণ চাহাল ভীখী, দলবীর চেতন- এরা সবাই গোটা সত্তর দশককে নানা সময়ে নানাভাবে তাদের সাহিত্যে ধরে রেখেছিলেন। এদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য যিনি, তিনি হচ্ছেন আশির দশকের কবি কবি অবতার শিং পাশ। তিনি খালিস্তান আন্দোলনের উগ্র জাতীয়তাবাদী ও কংগ্রেসের রাজনীতির বিরোধী এক জোরালো কণ্ঠস্বর ছিলেন। ১৯৮৮ সালের ২৩ মার্চ উগ্র জাতীয়তাবাদীদের হাতে খুন হন তিনি। স্পেনের গৃহযুদ্ধে ফেদরিকো গার্সিয়া লোরকা যেভাবে অল্প বয়সে শহিদ হোন, সেভাবে অবতার শিং পাশকেও পাঞ্জাবের লরকা বলা হয়ে থাকে।

 

এভাবে বিশ শতকের সত্তরের দশক ইতিহাসে এমন এক সন্ধিক্ষণ, যেখানে এসে সমাজ ও সাহিত্যের সমস্ত উপাদনই আলোড়ন সৃষ্টি করে গেছে। পুরোনো সংস্কৃতির হেজিমনি ভেঙে দিয়ে তৈরি করেছে এমন এক সাংস্কৃতিক কাঠামো যা গণমানুষ থেকে বিযুক্ত নয়, তার জীবন, অবদমন ও প্রতিটি বিক্ষুব্ধ সময়ের সাথে সংপৃক্ত।

 

সহায়ক গ্রন্থাবলী

১। এবং অন্যকথা, জানুয়ারি ২০১৭।

২। অনীক, জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি ২০১৭।

৩। নকশাল আন্দোলনের গল্প, বিজিত ঘোষ সম্পাদিত। পুনশ্চ প্রকাশনী।

(লেখক আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ছাত্রী)

ng cover

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Website Powered by WordPress.com.

Up ↑