ধলা হত্যাকাণ্ড, এনআরসি ডি-ডিটেনশন ও নাগরিক আত্মহত্যা : বিজেপিকে পরাস্ত করার আহ্বান আসামের দুই সংগঠনের

ডি-ভোটার, ডিটেনশন ক্যাম্প, নাগরিকদের আত্মহত্যা ও ধলা-সদিয়া হত্যাকাণ্ডে সরকারের ন্যক্কারজনক ভূমিকার বিরুদ্ধে বিজেপি দলকে প্রত্যাখ্যান করুন।

নাগরিক হয়রানির বিরুদ্ধে ও জীবন-জীবিকার সুরক্ষার দাবিতে মেহনতি মানুষের ঐক্য গড়ে তুলুন।।

ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি ও অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বান

বন্ধুগণ,

২০০৩ সালে বিজেপি পরিচালিত এনডিএ সরকার নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে এই আইনে থাকা ‘অভিবাসী’ শব্দের আগে জুড়ে দেয় ‘অবৈধ’ শব্দটি। কলমের এক খোঁচায় অবিভক্ত ভারতের লক্ষ লক্ষ বাসিন্দা হয়ে যান ‘অবৈধ প্রব্রজনকারী’ – কার্যত বাতিল করে দেওয়া হয় জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ। এবার এই বিজেপি সরকারই এক অসাংবিধানিক বিল (নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল-২০১৬) এনে নাগরিকদের বিপদের মধ্যে ঠেলে দেয়। এই বিল যে তারা শুধুমাত্র নির্বাচনী ফায়দা তুলতেই এনেছিল সেটা এখন পরিষ্কার। এনআরসি প্রক্রিয়া ও ডি-ভোটারের মাধ্যমে নাগরিক হয়রানি চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা তৈরি হয়েছিল ১৯৭১ সালকে ভিত্তিবর্ষ হিসেবে ধরে ১৯৯৭ সালের ভোটার তালিকাকে সংশোধন করে। তাই ২০১৪ সালের ভোটার তালিকার ভোটারদের প্রাথমিকভাবে নাগরিক হিসেবে মান্যতা দেওয়ার দাবি আমরা দীর্ঘদিন থেকে জানিয়ে আসছি। কিন্তু বিজেপি সরকার এই যুক্তিসংগত দাবি শোনা তো দূরের কথা উপরন্তু আসামের বিভিন্ন জাতি-জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরির মাধ্যমে মেরুকরণের নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এই দাবির পক্ষে বললেও কংগ্রেস যে এ দাবি জোরেসোরে তুলছে না সেটা বিরোধী দল হিসেবে তাদের দোদুল্যমান চরিত্রকেই বুঝিয়ে দেয়। আমাদের এই দাবিতে সোচ্চার হতে হবে এবং আক্রান্ত মানুষকে অবজ্ঞার জন্য বিজেপি দলকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রত্যাখ্যান করে উচিত শিক্ষা দিতে হবে।

২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক-মুহূর্তে ডি-ভোটার সমস্যার সমাধান, ডিটেনশন ক্যাম্প ‘গুড়িয়ে’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি দল। এগুলি উঠিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা, ডিটেনশন ক্যাম্প ও ডি-ভোটারের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের শাসনকালে। এমনকি গোয়ালপাড়ার ডাকুরভিটায় ২০ বিঘা জমির উপর মেগা-ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে।

এই সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে নাগরিকদের মনে নাগরকিত্ব হারানোর ভয় সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন বঞ্চনার বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ দমন করে রাখা ও একশ্রেণির গরিব, দলিত ও পিছিয়ে পড়া মানুষকে অনাগরিক করে দিয়ে সস্তা মজুরে পরিণত করে দেওয়া, যাতে করে শ্রমের বাজারে কর্পোরেট ও বৃহৎ পুঁজির মুনাফা নিশ্চিত করা যায়। নাগরিকত্ব প্রমাণ করার প্রক্রিয়ায় সরকারের কাছ থেকে ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কাতেই চল্লিশ জনেরও অধিক নাগরিক আত্মহত্যা করেছেন ইতিমধ্যে। তিনসুকিয়া জেলার ধলায় ৫ জন দরিদ্র শ্রমজীবী নাগরিকের হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি প্রদানে সরকার নিষ্ক্রিয় থেকেছে। নাগরিকদের সন্ত্রস্ত করে রাখা ও ভাগ করে শাসন করার নীতিতে বিশ্বাসী এই ফ্যাসিস্ট বিজেপি দলকে প্রত্যাখ্যান করা অবশ্যই জরুরি।

নাগরিক হয়রানির জবাব দিতে এবং এনআরসি প্রক্রিয়ার নামে অনাগরিক করার সরকারি চক্রান্ত থেকে জনগণের মুক্তি পাওয়ার প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির মতো ফ্যাসিস্ট শক্তিকে ক্ষমতাচ্যুত করা। কিন্তু নাগরিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান এবং মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তেল ক্ষেত্র, পেপার মিল সহ সমস্ত সরকারি সম্পত্তি ও উদ্যোগ ব্যক্তিগতকরণ করে কর্মী ছাঁটাই ও নতুন কর্মসংস্থানের অভাবে বেকারত্ব বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। দাবি তুলতে হবে সব ধরনের কাজে আইন মোতাবেক ন্যূনতম মজুরি প্রদান করা, নির্মাণ-পরিবহণ-শিক্ষা-স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা প্রদান ও শ্রমিক হিসেবে গণ্য করে ন্যূনতম মাসিক বেতনের ব্যবস্থা করা, বৃহৎ পুঁজিপতিদের জমি প্রদানের জন্য কৃষক ও বাসিন্দাদের উচ্ছেদ বন্ধ করা ও জমির পাট্টা প্রদান করা, প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সম-অধিকার ও সম-মর্যাদা, রাজ্যের ভাষিক-সাংস্কৃতিক চরিত্র অক্ষুন্ন রাখা, মুখের ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, অসমের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া, অসমকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে জনমুখী উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনের জন্য অসমে প্রতিটি জনগোষ্ঠী তথা সকল স্তরের শোষিত মেহনতি মানুষের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

সরকার ও রাষ্ট্র বৃহৎ পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করতে মেহনতি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই যুদ্ধে রাষ্ট্রের আক্রমণগুলোর বিরুদ্ধে জনগণকে দাঁড়াতে হবে দৃঢ়তার সাথে। অসমবাসীর বৃহত্তর ঐক্যই পারে এই লড়াইয়ে জয় ছিনিয়ে আনতে।

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক, ফ্যাসিস্ট ও জনবিরোধী বিজেপি দলকে পরাস্ত করুন।

বিজেপিকে পরাজিত করতে পারে এমন শক্তিশালী প্রার্থীকে ভোট দিন।

জনগণের প্রকৃত ক্ষমতায়ন ও গণ-আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে সমস্ত মেহনতি নিপীড়িত শ্রেণির ঐক্যের মধ্য দিয়ে ব্যাপক গণমোর্চা গড়ে তুলুন।


আহ্বায়ক সংগঠনদ্বয়ের পক্ষে অরিন্দম দেব, ফারুক লস্কর, দেবজিৎ চৌধুরী, কৃষ্ণকান্ত গগৈ, চন্দ্রধর কলিতা, মৃণাল কান্তি সোম, রবসন মুণ্ডা, ধরিত্রী শর্মা, অরুণ কর্মকার, শিশির দে, জগৎ সিনহা, মানস দাস, অসিত চক্রবর্তী, মলয় চক্রবর্তী, শান্তি মিত্র, পারভেজ খসরু লস্কর, নুমান আহমেদ ও মানস সরকার দ্বারা প্রচারিত।

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Website Powered by WordPress.com.

Up ↑