ডলুতে শ্রমিক বিদ্রোহ ও রাষ্ট্রের আগ্রাসন : নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্রের অভ্যন্তরেই রয়েছে স্বৈরতন্ত্রের বীজ

অরূপ বৈশ্য

মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুটি দল — রাষ্ট্রের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মুখোমুখি চা-শ্রমিকদের প্রতিরোধ।

প্রেক্ষাপট

অসমের কাছাড় জেলার ডলু চা-বাগান এখন সংবাদ শিরোনামে। এক সময় সেই বাগান উৎপাদনের নিরিখে এ অঞ্চলের সবচাইতে উন্নত বৃহৎ বাগান হিসাবে পরিচিত ছিল, পরিচিত ছিল এক বৃহৎ প্রাকৃতিক জলাশয় সহ তার নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের আশা ছিল, ডলু পর্যটকদের জন্য এক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠবে। বিভিন্ন মালিকের অধীনে ব্যবসায়িক ও শ্রমিক পরিষেবার দৃষ্টিতে দীর্ঘকাল উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছে এই চা-শিল্পটি। অন্তর্বর্তীকালীন কয়েক বছর সিটু সহ অন্যান্য ট্রেড ইউনিয়নদের নিয়ে জেলা উপায়ুক্তের অধীনে সমবায়ের ভিত্তিতেও পরিচালিত হয়েছে। এই সমগ্র সময় জুড়ে বাগান শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের যে সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা তার অবনতিই হয়েছে। সামবায়িক ভিত্তিতে চলাকালীনও দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান মালিকের কাছে ডলু হস্তান্তরিত হয় ২০১২ সালে। কোম্পানি আইনে নতুন মালিক ও পুরোনো মালিকের মধ্যে মালিকানা সংক্রান্ত বিবাদ ট্রাইব্যুনালে রয়েছে। পুরোনো প্যাটেল ফেমিলি ট্রাইব্যুনালের বিচারাধীন মামলা ও স্থিতাবস্থার আদেশ উল্লেখ করে জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার আবেদনও জানিয়েছিল। সে যাই হোক, বর্তমান মালিকের অধীনে ডলু বাগান লাভেই চলছিল, ২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০-এর ডলু কোম্পানির ব্যালেন্স শিট কোম্পানির মুনাফা ও শেয়ার ভ্যালু বৃদ্ধির তথ্য দেখাচ্ছে, এরপর ব্যবসায়িক ইকো-সিস্টেমে এমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি যা কোম্পানির লোকসান হতে পারে, কোভিড বিপর্যয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারে চা-সেবন বেড়েছে বই কমেনি।

শিলচরের সাংসদ কেন্দ্রীয় বিমান পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে বরাক উপত্যকায় একটি গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর নির্মাণের তদ্বির করছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই বিমানবন্দরের স্থান নির্বাচনে তিনি তাঁর নির্বাচনী চক্রকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। সেই সূত্রে ডলু আবারও সংবাদ শিরোনামে চলে এসেছে। তারা মুখে বলছেন যে এএআই কর্তৃপক্ষ নাকি ডলুকে উৎকৃষ্ট স্থান হিসাবে নির্বাচিত করেছে, কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো রিপোর্ট কোনো অফিশিয়াল সাইটে খুঁজে পাওয়া যায়নি। শিলচরের একটি দৈনিকের ৭ মে তারিখের প্রতিবেদনে জানা যায় যে ডলু’র পাশে একটি পরিত্যক্ত চা-বাগান ‘খরিলে’ বিমানবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব নাকি সর্বানন্দ সোনোয়াল মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন গৃহীত হয়েছিল, কিন্তু ভূমি মাফিয়ার চক্রান্তে সেই প্রস্তাব বাতিল হয়। সরকার ভূমি মাফিয়ার চাপের কাছে নতি স্বীকার করে, কিন্তু শ্রমিকদের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে ফসলি জমি অধিগ্রহণ করতে বলপ্রয়োগে পিছ-পা হয় না। খরিল বাগানের জমি পাওয়া যেত বিনামূল্যে, কিন্তু ডলুতে চা-গাছের মূল্য হিসাবে দিতে হচ্ছে ক্ষতিপূরণ। চা-বাগানের জমি যেহেতু লিজ জমি, তাই জমি অধিগ্রহণে কোনো ক্ষতিপূরণ সরকারকে দিতে হয় না।

চারাগাছ কেটে এয়ারপোর্ট নয় — ময়নাগড় ডিভিশনে অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকদের মিছিল। ২৭ এপ্রিল ২০২২

স্টেকহোল্ডারদের ভূমিকা

সরকার যখন ডলুতে বিমানবন্দর করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন বাগান মালিক ও শ্রমিকের সম্মতির প্রয়োজন পড়ে। ডলুর মোট ৯৫০০ বিঘা জমির ২৫০০ বিঘা ফসলি জমি হস্তান্তরের জন্য মালিকপক্ষ কোন এক রহস্যজনক কারণে অতি-আগ্রহী হয়ে ওঠে। কিন্তু রহস্যের সেখানেই শেষ নয়। শ্রমিকপক্ষ হিসাবে আইএনটিইউসি, বিএমএস ও সিটু’র সাথে মালিকপক্ষ সরাসরি আলোচনা শুরু করে এবং সে অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তাতে ফসলি জমি হস্তান্তরের সম্মতি জানিয়ে তিনটি ট্রেড ইউনিয়ন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের অংশগ্রহণে একটি চূড়ান্ত ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে কোথাও শ্রমিকের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়নি, বরঞ্চ তিনটি ট্রেড-ইউনিয়ন শ্রমিকের মতামতকে উপেক্ষা করে শ্রমিকের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে মালিকের কাছে দাসখত লিখে দিয়েছে – এই অভিযোগ উত্থাপন করে অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন। গোপনীয়তার ধারা অন্তর্ভুক্ত করে চুক্তিকে মাসাধিককাল গোপন রাখা হয়। ২৫০০ বিঘা ফসলি জমি হস্তান্তর করার খবর সংবাদপত্রে আসতেই শ্রমিকদের মধ্যে জীবন জীবিকার শঙ্কা দেখা দেয়। এতোটা ফসলি জমি চলে গেলে প্রায় ২০০০ শ্রমজীবী মানুষ উদ্বৃত্ত হয়ে পড়বে, ডলু বাগানে তাদের কর্মসংস্থান বিপন্ন হবে। অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন ডলু এলাকায় একটি পরিচিত নাম, তারা দীর্ঘকাল থেকে ডলু এলাকায় শ্রমিকদের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে কাজ করছে, কিন্তু অন্যান্য ইউনিয়ন বিশেষ করে সিটু’র ইউনিয়নের কমিটি থাকায় তারা নতুন করে বাগান কমিটি গঠন করেনি। শ্রমিকরা অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে জমি হস্তান্তরের বিরুদ্ধে মিছিল মিটিং ইত্যাদি প্রতিবাদী কর্মসূচী পালন করতে শুরু করে। আইন মোতাবেক সামাজিক অডিট ও পরিবেশ অডিট করার এবং চুক্তিকে প্রকাশ্যে আনার দাবিতে ইউনিয়ন রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারকে স্মারকপত্র পেশ করে। জিলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা ও বহু টানাপড়েনের পর ২৫ এপ্রিলে ইউনিয়নের সাথে প্রশাসনের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় প্রশাসন ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের হাতে চুক্তিপত্র তুলে দেন এবং ঐ দিনই প্রশাসন ফেসবুকে চুক্তিটি পোস্ট করেন। প্রশাসন চুক্তি সম্পর্কে অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের লিখিত জবাব জানতে চায়। জবাবে ইউনিয়ন চুক্তির ধারাগুলি ব্যাখ্যা করে বলে যে লাভজনক কোম্পানির শ্রমিকের পিএফ-এর অর্থ পিএফ ফাণ্ডে জমা না দেওয়া পিএফ আইন ও চা-আইনের বিভিন্ন ধারায় শাস্তি যোগ্য অপরাধ। কোম্পানি সেই অর্থ জমা দেয়নি, অথচ চুক্তিতে লিখা হয়েছে ক্ষতিপূরণের টাকা থেকে সেই বকেয়া দেওয়া হবে। কোম্পানি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে কোম্পানি পে-রোল থেকে শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হবে না, অথচ ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের কী হবে, প্রতিশ্রুতি পূরণের আইনি গ্যারান্টি যেমনি চুক্তিতে নেই, ঠিক তেমনি ২৫০০ বিঘা ফসলি জমি কমে গেলে অতিরিক্ত শ্রমিকদের কীভাবে কাজে লাগানো হবে তার কোন সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই। এমনকি বিষয়ের সাথে সম্পর্কহীনভাবে শ্রমিকের কী কী নিয়ম মেনে চলতে হবে তার বিধানও তাতে সংযোজিত হয়েছে, যদিও শ্রমিকের নিয়ম নীতির ব্যাপারে ফ্যাক্টরি আইন অনুযায়ী স্ট্যান্ডিং-অর্ডার রয়েছে। আসলে এই চুক্তিটি একটি নির্বাচনী ঘোষণাপত্রের মতো, তাতে শ্রমিকদের সুরক্ষার কোন আইনি পরিভাষা ও বিধান নেই। এই চুক্তিতে ইউনিয়নগুলি স্বাক্ষর করেছে শ্রমিকদের অন্ধকারে রেখে।

চুক্তি ও অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন

এনটিইউআই অনুমোদিত অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন চুক্তির বাংলা তর্জমা করে শ্রমিকদের মধ্যে বিলি করে ও ডলু, ময়নাগড় ও লালবাগ ডিভিশনের শ্রমিকদের সাথে বিস্তৃত আলোচনা করে। এতদিন যারা ছিলেন মার্জিন, তারা রাতারাতি কথা বলতে শুরু করলেন, যুক্তি-তক্কে প্রশাসন ও চুক্তি-স্বাক্ষরকারী ইউনিয়ন নেতা, পাতিনেতা ও ম্যানেজমেন্টকে বিধ্বস্ত করতে শুরু করে সমাজ-রাজনীতির কেন্দ্রে প্রবেশ করতে শুরু করলেন। মার্জিন ছাড়া কেন্দ্রের অস্তিত্ব থাকে না, শাসকশ্রেণি ও দল যে কেন্দ্রকে নিয়ন্ত্রণ করে সেই কেন্দ্রে আঘাত করাই নিপীড়িতের রণনীতি। অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন দাবি তোলে যে এই চুক্তি বাতিল করতে হবে এবং শ্রমিকদের মতামত নিতে গণশুনানি করতে হবে। চাপে পড়ে প্রশাসন গণশুনানির দাবি মেনে নেয় এবং ডলুর ময়নাগড় ও লালবাগে দু’টি গণশুনানিতে হাজার হাজার শ্রমিকরা একবাক্যে জমি হস্তান্তরের প্রস্তাবকে খণ্ডন করে এবং প্রশাসনের প্রস্তাব অনুযায়ী ২৩২৮ জন শ্রমিকের স্বাক্ষর সহ লিখিত বক্তব্য জমা দেয়। তাতে শ্রমিকরা এও বলে যে নতুন চারা-গাছ লাগানোর জন্য ২৫০০ বিঘা নতুন জমি ডলু বাগানে কোথায় আছে তা জমি জরিপ করে দেখিয়ে দিক বাগান মালিক ও প্রশাসন। দাবি জানায় দীর্ঘদিন থেকে বাসরত শ্রমিক পরিবারদের জমির পাট্টা প্রদান করার। শাসক দলের প্রতিনিধি ‘মাওবাদী’ আখ্যায়িত করে আন্দোলনকারীদের ‘শুরু থেকে সশস্ত্র সংগ্রামের’ প্রবক্তা হিসাবে আন্দোলনকারীদের উপর মিথ্যা আরোপ লাগাতে সচেষ্ট হন যাতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নামানো যায়, কিন্তু গণ-আন্দোলনের চাপে পুলিশ সুপার বলতে বাধ্য হন যে এই আন্দোলনের পেছনে কোন ‘মাওবাদী’ সম্পর্ক নেই। অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব জানত রাষ্ট্র-ক্ষমতা, অর্থনীতি, বাজারশক্তি ও সমাজ-রাজনীতির স্তরীভূত শাসন ব্যবস্থায় মার্জিনের এই দুঃসাহস শাসক বেশিদিন সহ্য করবে না, সুতরাং শাসকের প্রতি-আক্রমণকে প্রতিহত করার একটাই পথ, সেই পথ হচ্ছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শ্রমিকদের ঐক্য গড়ে তোলা। শাসকরাও জানত ইউনিয়ন সেই পথে এগোতে চাইবে, সুতরাং যদি শ্রমিকদের বশ মানানো না যায়, তাহলে দ্রুত মোক্ষম আঘাত করে আন্দোলনকে দমন করা চাই। সেখানে আপাতদৃষ্টিতে শাসকশ্রেণি সফল।

শ্রম প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন

ইউনিয়ন আন্দোলন হচ্ছে পুঁজি ও শ্রমের সম্পর্কে এমন এক মধ্যস্থতাকারী প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা যা সামাজিক শ্রেণি সম্পর্কে শক্তির ভারসাম্যে বাস্তব পরিস্থিতির গতির অভ্যন্তরে শ্রমিকের শক্তিকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করে শ্রমিকের মজুরি ও সামাজিক সুরক্ষা আদায়ে পুঁজির উপর চাপ সৃষ্টি করে। সেই চাপ সৃষ্টি করে পুঁজি নিয়ন্ত্রিত কাঠামোর অভ্যন্তরে। পুঁজির নিয়ন্ত্রিত সেই কাঠামো শুধুমাত্র বাজার শক্তির ভারসাম্য নয়, রাষ্ট্রশক্তি ও বাজারশক্তি পরস্পর জড়িয়ে থাকা এক বাস্তবতা, আর পুঁজিবাদের সমগ্র ইতিহাস জুড়ে সেই রাষ্ট্রশক্তির উপস্থিতিই প্রমাণ করে যে পুঁজির শোষণে সস্তা শ্রমের জোগান সুনিশ্চিত করতে জনগোষ্ঠীয় শোষণের মাত্রা শ্রম-শোষণ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু পুঁজির আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে চালিকাশক্তি জনগোষ্ঠী নয় কারণ তা পুঁজির শোষণের মূল নিয়মকে আঘাত করে না এবং রাষ্ট্র ও পুঁজি নিজের পরিচালনা পদ্ধতিকে পরিবর্তন করে সেই জনগোষ্ঠীগত বিদ্রোহকে আত্মসাৎ করে নিতে সক্ষম। উৎপাদন ও শ্রম প্রক্রিয়ায় পুঁজির নিও-লিবারেল পুনর্গঠনের মাধ্যমে যে পরিবর্তনগুলি হয়েছিল তার থেকে বিশ্বব্যাপী সন্ধান করা হয়েছিল মার্ক্স বর্ণিত সমাজ-পরিবর্তনের শ্রমিকশ্রেণির এজেন্সিকে জনগোষ্ঠী দিয়ে প্রতিস্থাপিত করার প্রক্রিয়ায়। মার্কস তার সময়ের সংগঠিত শিল্প-শ্রমিককে দেখেছিলেন এবং তার ভিত্তিতেই কম্যুনিস্ট ম্যানিফেস্টো লিখেছিলেন, বর্তমান সময়ের শ্রমিকের স্বরূপকে দেখে যাননি, কিন্তু অন্যত্র সাধারণ তাত্ত্বিক নির্মাণে পুঁজির বিপরীতে সাধারণভাবে শ্রমজীবীদের কথাই লিখেছেন। নিও-লিবারেল পুনর্গঠনের ফলে যে উৎপাদন ও শ্রম প্রক্রিয়ার পরিবর্তন সাধিত হয়, সেই বাস্তবতার গর্ভে বিশ্বব্যাপী পরিচিতির আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। বাম ও বিপ্লবীদের একাংশ সেই পরিচিতির আন্দোলনের গর্ভ থেকে শ্রমিকশ্রেণিকে নেতৃত্বে নিয়ে আসার তাত্ত্বিক নির্মাণ ও অনুশীলন করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পরিচিতির আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী বড় অংশই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জনগোষ্ঠীগত সংকীর্ণতায় নিমজ্জিত হয় এবং পুঁজি ও রাষ্ট্র তাদেরকে আত্মস্থ করে বর্তমান ব্যবস্থায় অঙ্গীভূত করে নেয়, বিপরীতে জাতি-ধর্ম-বর্ণের পরিচিতির সীমা অতিক্রম করে শ্রমজীবীদের এক সাধারণ ক্যাটাগরিও গড়ে ওঠে। এই সার্বিক বাস্তবতার নিরিখে ডলুর বাগানের চা-শ্রমিকদের অবস্থানকে বিচার করে দেখা যাক।

ডলু তথা চা-বাগানে শ্রেণি সম্পর্ক

অসমের চা-বাগানে প্রধানত আইএনটিইউসি’র ইউনিয়ন ছিল। কংগ্রেসি সেই ইউনিয়নের মূল চালিকা শক্তি ছিল শ্রমিকদের সর্দার শ্রেণি যারা বাগান ম্যানেজমেন্টের ঘনিষ্ঠ কারণ তাদের উপর দায়িত্ব ছিল শ্রমিকদের শৃঙ্খলা বজায় রাখা। ফলে শ্রমিক-মালিক বিবাদ দেখা দিলে কংগ্রেসি ইউনিয়ন সর্বদাই মালিকের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে সমঝোতা করে দিত। ডলু বাগানের স্বাধীনতা-উত্তর পর্যায়ে শ্রমিক-আন্দোলনের এক ইতিহাস রয়েছে। সেই আন্দোলনে ব্যতিক্রমী সৎ কংগ্রেসি নেতা, বামপন্থী ও বিপ্লবী নেতাদের অবদান রয়েছে। বিপ্লবীদের ইউনিয়ন গঠন না করার নীতি থাকায়, এই সংগ্রামের ঐতিহ্যকে অনুসরণ করেই সিটু এই বাগানে সর্ব বৃহৎ ইউনিয়ন হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু সিটু ইউনিয়নও পুরোনো সর্দার গোষ্ঠীর আধিপত্যকে ইউনিয়ন কাঠামো থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি, বরঞ্চ শ্রমিকের মধ্য থেকে যে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠেছিল তাদেরকে পুরোনো কায়দায় ইউনিয়ন পরিচালনা করার শিক্ষায় অভ্যস্ত করে তুলে, বাগানের অধিকাংশ যে মহিলা শ্রমিক তাদেরকে নেতৃত্বে নিয়ে আসার পথ অবরুদ্ধই রেখে দেয়। শ্রমিক সংগ্রামকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে চা-বাগানের শ্রমিকদের চাঁদা ও ম্যানেজমেন্টের অনুদানের উপর নতুন নেতৃত্বের আর্থিক নির্ভরশীলতা সাধারণ শ্রমিক থেকে সামাজিক ও মানসিক বিচ্ছিন্নতাকে প্রকট করে তোলে। এই ইউনিয়ন নেতৃত্বের এক গোষ্ঠীগত (Clan) চরিত্রও বিদ্যমান ছিল। অবিসি, এসসি, এসটি হওয়ার স্বীকৃতির জন্য যে আর্থ-সামাজিক প্যারামিটার বিবেচ্য সেই মানদণ্ডে ডলু চা-বাগানে বিভিন্ন গোষ্ঠী রয়েছে, ইউনিয়নের নেতৃত্বে সাধারণভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে আর্থ-সামাজিকভাবে অগ্রসর অংশ। ফলে সিটুর মতো ইউনিয়ন যারা শ্রেণিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে ডলু বাগানে প্রাধান্য বিস্তার করেছে তারাও গুণগতভাবে কংগ্রেস বিজেপির ইউনিয়নের পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। তথাপি সেই ইউনিয়গুলির প্রাধান্য এতকাল বজায় ছিল ম্যানেজমেন্টের সাথে এক গোপন সমঝোতার মাধ্যমে এবং ইউনিয়নকে টিকিয়ে রাখার মালিকের স্বার্থ অনুযায়ী শ্রমিকদের সামান্য কিছু পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভনের মাধ্যমে। শ্রমিকের শৃঙ্খলাকে সুদৃঢ় করতে ইউনিয়নকে টিকিয়ে রাখাও বাগান ম্যানেজমেন্টের এক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা। ম্যানেজমেন্টের এই উদ্দেশ্যে নির্মিত বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে যারা ইউনিয়ন পরিচালনা করেন তারাই প্রকৃত শ্রমিকের ইউনিয়ন, সে অর্থে বিপ্লবী শ্রমিক ইউনিয়নের ধারণা একটি অতিকথন।

কিন্তু নয়া-উদারবাদী শ্রম প্রক্রিয়ার সার্বিক পুনর্গঠনের প্রভাব এবং চা-শিল্পে নতুন বিনিয়োগের অভাব চা-বাগানের মত সংগঠিত শিল্পেও স্বাভাবিকভাবে পড়েছে। শ্রমিকের চাহিদা কমে যাওয়ায় ও ব্যয় সংকোচনে সর্দার, বিভিন্ন ধরনের তদারকির কাজে নিযুক্ত কর্মী, বাবু স্টাফ ইত্যাদির সংখ্যা কমেছে, কমেছে তাদের সুযোগ-সুবিধা এবং সাধারণ শ্রমিকদের উপর তাদের আধিপত্য। ফলে ম্যানেজমেন্ট ও সাধারণ শ্রমিকের মাঝখানের মধ্যসত্ত্বভোগী শ্রেণিটির অবনমন ঘটেছে সাধারণ শ্রমিকের স্তরে। প্রতিটি বাগানের মতো ডলু বাগানের বহু শ্রমিক আজকাল অত্যন্ত কম বেতনে কাজ করছে বাগানের বাইরে, এমনকি ভিন রাজ্যে। সেখানে তাদের শ্রমিক-সাথী জুটেছে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে। একসময় বাঙালি বাবু স্টাফদের সাথে শ্রমিকের দ্বন্দ্বকে ব্যবহার করে হিন্দিভাষী নেতৃত্ব ছাড়া চা-বাগানে বাঙালি নেতৃত্বের সরাসরি অনুপ্রবেশ অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বাঙালিদের সাথে সেই দূরত্ব এখন প্রায় মিটে গেছে। জনগোষ্ঠীয় আকাঙ্ক্ষা হয়ে পড়েছে শ্রমিক স্বার্থের অধীন। মালিকের সাথে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে ও শ্রেণি সংগ্রামকে শিকেয় তুলে রেখে সিটুর দীর্ঘকালীন অনুশীলন শ্রমিক স্বার্থের নেতৃত্ব দিতে অপারগ করে তুলেছে।

সেই শূন্যতাকে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার ভরাট করার চেষ্টা করেছে হিন্দুত্বের অধীনে জনগোষ্ঠীয় কালচারেল সিম্বলগুলিকে আত্মস্থ করে ও সরকারি অনুদানের এক বিস্তৃত জাল বিছিয়ে। কিন্তু তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে সরকারি অনুদানের জালটিও ক্রমশ গুটিয়ে আনতে হচ্ছে। বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের এই সাংস্কৃতিক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে একদল মার্কসবাদী কালচারেলিজমের মোহজালে আঁটকে পড়েছেন, পরিচিতি ও বৈচিত্র্যের রণহুঙ্কারে সঙ্ঘ পরিবারের রাজনীতিকে মোকাবিলা করার এক কাল্পনিক বাস্তবের নির্মাণ করে চলেছেন, যখন জনগোষ্ঠীয় সংগঠনগুলি ক্রমাগত আত্মসমর্পণ করছে পুঁজি ও রাষ্ট্রের বিছানো জালে। ডলু বাগানেও চা জনজাতি ছাত্র সংস্থা নামে একটি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিল, তারা শুরুতে জমি-হস্তান্তর বিরোধী কিছু     অতি-নাটকীয়তা করে শাসকশ্রেণির কাছে বিকি খেয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে শ্রমিকদের স্তরবিন্যাসে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তাতে সিটু ও সঙ্ঘ পরিবারের নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত দুর্বল ভিতের উপর দাঁড়িয়েছিল। সেটা তারা আবিষ্কার করেন যখন পুঁজি মালিক ও রাষ্ট্রের সাথে শ্রমিকের দ্বন্দ্ব হঠাৎ করে সমস্ত আড়াল ভেঙে মুখোমুখি এসে পড়ে। বামপন্থীরা ও সংস্কৃতিবাদীরা আবিষ্কার করেন তাদের সৃষ্ট ‘সাগিনা মাহাতোদের’।

পুঁজির আগ্রাসন

অসমের টালমাটাল অর্থনীতিতে দিশাহীন শাসকদল মরিয়া হয়ে উঠেছে ব্যক্তি পুঁজির বিনিয়োগ টানতে। ব্যক্তি পুঁজি মালিকদের আকর্ষিত করতে তারা যোগাযোগের ও বাজারের বিচারে প্রাইম-ল্যান্ডগুলি তুলে দিতে চাইছে মালিকদের হাতে। চাহিদার অভাবে পুঁজির মালিকরা উৎপাদনী বিনিয়োগে দ্বিধাগ্রস্ত, ফলে অসমের মত প্রত্যন্ত একটি প্রদেশে পরিকাঠামোগত বিনিয়োগে পুঁজি-মালিকদের আকর্ষিত করছে। সেই লক্ষ্যে অসমের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে অমানবিক উচ্ছেদ অভিযান, এই অভিযানে আক্রান্ত ও সর্বস্বান্ত হচ্ছেন শ্রমজীবী ও দরিদ্র লোকেরা। জমি নির্ধারণে পুঁজির চাহিদার প্রাধান্য নিপীড়িত পরিচিতিকে নিশানা করার রাজনৈতিক পরিকল্পনাকে অতিক্রম করে সব জনগোষ্ঠীর দুর্বল শ্রেণির উপর আঘাতের রূপ পরিগ্রহ করছে। পুঁজির স্বার্থের উপযোগী প্রাইম-ল্যান্ড ও বিভিন্ন দক্ষতার সস্তা শ্রমিক যোগান সুনিশ্চিত করতে অসমের কোন জনগোষ্ঠীর দুর্বল অংশকে যে রেয়াত করা হবে না, সেই বার্তা বর্তমানের উচ্ছেদ অভিযানে প্রকট। পুঁজির বর্তমান রূপের ‘আদিম সঞ্চয়নের’ বর্বরতার নিদর্শন ডলু বাগান। কেন ডলু বাগান বেছে নেওয়া হল ? পুরোটাই পুঁজির খেলা। মধ্যস্তত্ত্বভোগীরা আর এখন চা-বাগানের শ্রমিকদের স্তর-বিভাজনের অভ্যন্তরে বাস করে না, এরা বাস করে বিদ্যমান কর্পোরেট বৃহৎ পুঁজির দালাল হিসাবে সব দলের প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী কর্তাব্যক্তিদের ও তাদের বশংবদ জনগোষ্ঠীয় নেতাদের মধ্যে। ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারি তহবিল ব্যবহার করার লক্ষ্যেই ফলনশীল জমি অধিগ্রহণে স্থানীয় দালালদের অতি-উৎসাহ। সেই উৎসাহ বৃহৎ পুঁজির বিনিয়োগের স্বার্থের সাথে সম্পৃক্ত। পুঁজির এই রূপ ও শ্রমিকের অভ্যন্তরীণ গঠনের পরিবর্তন শ্রেণিসংগ্রামকে জাগিয়ে তুলতে সহায়ক। ফলে অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন যখন চুক্তির অসারতা ব্যাখ্যা করে এবং শ্রমিকরা যখন জানতে পারে তাদের মতামত না নিয়েই ইউনিয়নগুলি এমন এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, তখনই শ্রমিকদের এক ব্যাপক জাগরণ পরিলক্ষিত হয়। তারা গঠন করেন অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের বাগান কমিটি। প্রতিদিন ব্যাপক সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর ফ্ল্যাগ-মার্চ ও বাগান-মালিকের বাগান লক-আউটের হুমকিকে উপেক্ষা করে হাজার হাজার শ্রমিক বিক্ষোভে উত্তাল করে তুলেন ডলু চা-বাগান চত্বর, জেলা প্রশাসনের অফিস চত্বর।

তবে কেন শ্রমিকের সাময়িক পিছু হঠা?

তার কারণ খুঁজতে হয় অসমের সামগ্রিক সামাজিক-রাজনৈতিক পরিসরে ও বামপন্থীদের ভূমিকায়। অসমের শ্রমিকদের বিভিন্ন অংশের ক্ষোভের অভিব্যক্তি ঘটেছে তাদের পরস্পর বিচ্ছিন্ন গণ-বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে। কিন্তু শ্রমিকের শ্রেণি ঐক্যের মাধ্যমে শ্রেণি-সংগ্রামের রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিপরীতে বামপন্থীরা “কাল্পনিক সংগ্রামের” এক অবয়ব নির্মাণ করে মদত দিয়েছেন জনগোষ্ঠীগত বিভাজনে, অন্যদিকে বিরোধী শাসকশ্রেণির রাজনৈতিক শিবিরে কোন বিকল্প রাজনীতির অস্তিত্বই ছিল না, সরকারি দল কংগ্রেস থেকে শুরু করে ইউডিএফ সহ জাতীয়তাবাদী শিবিরেরে নেতৃস্থানীয়দের তথাকথিত উন্নয়নের লেনদেনে পুঁজির উচ্ছিষ্ট ভোগের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনায় বিরোধী রাজনীতিকে ভোঁতা করে দেয়। নাগরিকত্বকে কেন্দ্র করে অমানবিক আক্রমণের সময় আমরা তাদের যে ভূমিকা দেখেছি, সেই একই ভূমিকার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। বিপ্লবী রাজনীতির একাংশও নিও-লিবারেলিজমের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া কালচারেলিস্ট বিকৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। ফলে ডলুর শ্রমিক বিক্ষোভ যে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো সচেতন সাংগঠনিক প্রস্তুতির অভাব পরিলক্ষিত হয়। শ্রেণি-সংগ্রাম থেকে দীর্ঘকালীন দূরত্ব বাম মন-মস্তিষ্ক যে কতোটা স্থবির ও প্রস্তরীভূত করে তুলেছে তার নিদর্শন সিটুর ভূমিকা, শ্রেণিসংগ্রামকে কালচারেলিস্ট টুইস্ট দেওয়ার একাংশের প্রবণতা। ডলুর শ্রমিকরা যখন জেগে ওঠে তীব্র প্রতিবাদ সাব্যস্ত করছে, গণশুনানিতে হাজার হাজার শ্রমিক একবাক্যে জানিয়ে দিচ্ছেন তাদের অসম্মতির কথা, তখন আশা করা গেছিল সিটু হয়ত শ্রমিকের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবে। সিটু তো সেই পথ মাড়ায়ইনি, বরঞ্চ মালিক নোটিফিকেশন জারি করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাগান লক-আউটের হুমকি দেওয়ার আগেই, জনৈক সিটু নেতা সংবাদপত্রে ঘোষণা করে দিলেন মালিক বাগান লক-আউট করে দেবে এবং তাতে শ্রমিকরা রুজি-রোজগারের অভাবে বিপদে পড়বে। অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন মালিকের চক্রান্তের অভিযোগ এনে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করে লক-আউটের সম্ভাবনা থেকে মুক্ত হতে পারলেও রাষ্ট্রের বিশাল পেশীশক্তির আয়োজনে, সশস্ত্র বাহিনীর বিশাল সমাবেশের সামনে আন্দোলনরত শ্রমিকরা সাময়িক পিছু হঠতে বাধ্য হয়। এই পিছু হঠা সাময়িক। সাময়িক এই অর্থে যে শ্রমিকের ঐক্য গড়ে তোলার শ্রেণিসংগ্রামের পথকে এবং পুঁজির অসম বিকাশের ফলে বিদ্যমান জনগোষ্ঠীগত বৈষম্যকে বর্তমান প্রেক্ষিতে তাত্ত্বিক নির্মাণের সাধারণ ম্যানিফেস্টোর ভিত্তিতে সচেতন বিষয়ীগত শক্তি যদি বিকশিত হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতেই শ্রমিকের জাগরণ বর্তমান ব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম হবে।

প্রশাসন যেদিন রাতে সার্বিক সশস্ত্র আগ্রাসী রূপে ফসলি জমি অধিগ্রহণের নোটিশ জারি করল, সেদিনই সকালে অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন সহ চারটি ট্রেড-ইউনিয়নের সাথে আলোচনায় বসল এবং যার থেকে কোন সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসেনি। সেই দুই বিপরীত প্রক্রিয়া দেখিয়ে দেয় যে, নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্রের অভ্যন্তরেই রয়েছে স্বৈরতন্ত্রের বীজ।

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Website Powered by WordPress.com.

Up ↑